মঙ্গলবার বেলা ১২টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রয়াত এই নেতার মরদেহ নিয়ে আসা হলে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার কফিন দলীয় পতাকায় ঢেকে দেন।
পরে কফিনে ফুল দিয়ে নীরবে কিছুসময় দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।
বিগত চার দলীয় জোট সরকারের কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার সোমবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে কাঁটাবন মসজিদে এক দফা জানাজার পর এই বিএনপি নেতার কফিন নিয়ে যাওয়া হয় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের আগে জানাজায় অংশ নেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, মোহাম্মদ শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, আবদুল হালিম, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল কাইয়ুম, শাহজাদা মিয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবুল হাই, রেজাউল করীম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ওবায়দুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, রফিক শিকদার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী ওই জানাজায় অংশ নেন।
অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, কাজী আবুল বাশার, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ইয়াসীন আলী, আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, রাজীব আহসান, এম এ মালেক ও শাহ নেসারুল হক।
এম কে আনোয়ারের বড় ছেলে মাহমুদ আনোয়ারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারের নির্যাতন এম কে আনোয়ারকে পিছু হটতে দেয়নি। তিনি গণতন্ত্রের যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন, সেই আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য সব সময় ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে তার এই চলে যাওয়া শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, আমাদের বিএনপির জন্য শুধু নয়, সমগ্র দেশের জন্য একটা অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এরকম নির্ভিক, সৎ মানুষ আমাদের মাঝে আজকাল বিরল।”
এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা একজন সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদকে হারালাম। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, তারা যেন এম কে আনোয়ারের জন্য দোয়া করেন।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ একজন সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং একজন ভদ্রলোককে হারিয়েছে।”
এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
কুমিল্লার হোমনা আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এম কে আনোয়ারের মরদেহ দুপুরে বিএনপি অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সংসদ ভবন দক্ষিণ প্লাজায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ সাংসদের কর্মকর্তারা সেখানে জানাজায় অংশ নেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার রাতে এম কে আনোয়ারের কফিন রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।
তার ছোট ছেলে মাসুদ আনোয়ার ও মেয়ে খাদিজা আনোয়ার বুধবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর সড়ক পথে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে এম কে আনোয়ারের নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার হোমনায়।
পথে দাউদকান্দির তিতাসে বাদ জোহর এবং হোমনায় বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে এই রাজনীতিবিদকে দাফন করা হবে।
এম কে আনোয়ারের মৃত্যুতে মঙ্গলবার শোক পালন করছে বিএনপি। সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অধনমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা।